হঠাৎ তিস্তা ইস্যুতে কেন মাঠে নামল বিএনপি
হঠাৎ তিস্তা ইস্যুতে কেন মাঠে নামল বিএনপি
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ওই অঞ্চলের পাঁচ জেলা জুড়ে তিস্তা পাড়ের ১১টি পয়েন্টে দুদিনের অবস্থান কর্মসূচি করছে বিএনপি। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলটির মহাসচিবসহ এক ডজনের বেশি সিনিয়র নেতা এখন ওই অঞ্চলে অবস্থান করছেন।যদিও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন হচ্ছে, এই আয়োজনে মূলত অংশ নিয়েছে বিএনপি ও এর মিত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। দুদিনব্যাপী এ জনসভায় প্রথমদিন দেওয়া ভাষণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন, সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন, আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো যে আচরণ সেটা বন্ধ করেন। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব দেখতে চাই। তবে সেই বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে, আমার পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার সঙ্গে।
কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির নেতারা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিস্তা নদীর পানি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ অবসানে প্রতিবেশী ভারতের ওপর যেন চাপ তৈরি হয় সেটিই তাদের লক্ষ্য। এ কারণেই সমমনা দল ছাড়াও তিস্তা অঞ্চলের অনেক সামাজিক সংগঠনকেও এ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তিস্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে এ কর্মসূচি দেওয়া হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন শুধু ভারতই নয়, বরং ডিসেম্বরের সম্ভাব্য নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে জনপ্রিয় ইস্যুগুলোর মাধ্যমে জনগণের আরও কাছে যাওয়া এবং এর মাধ্যমে মাঠের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করাই দলটির মূল উদ্দেশ্য।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলছেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে নির্বাচনের জন্য বিএনপি চাপ তৈরি করেছে কিন্তু নির্বাচনই বিএনপির একমাত্র দাবি নয়। বরং ভারত যেন তিস্তা সংকটের সমাধান করে জনগণের সেই দাবিটিই বিএনপি তুলে ধরতে চাইছে। এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে কুড়িগ্রামে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, বাংলাদেশের জন্য দুর্ভোগ তৈরি করে এমন প্রতিবেশীদের বিষয়ে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি সঙ্গে জনগণের সংহতির প্রকাশ ঘটবে তিস্তাপাড়ের কর্মসূচিতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখার পাশাপাশি বিএনপি আসলে সাধারণ জনগণকেও বার্তা দিতে চাইছে যে জনগণের ইস্যুগুলোকে নিয়ে শক্ত অবস্থান নিতেআরও পড়ুনঃ কোটা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত : শিক্ষামন্ত্রী
প্রসঙ্গত, তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত অন্যতম একটি অভিন্ন নদী। শুষ্ক মৌসুমে পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায় সেটি গত এক দশকেও আলোর মুখ দেখেনি। অভিন্ন নদী হিসেবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না করে উজানে তিস্তার পানির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত। ফলে এ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ আছে।
বিএনপি কী চাইছে
জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে বিএনপি ও তার সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করবেন। কর্মসূচির অংশ হিসাবে তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপিরই একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। সোমবার রংপুর জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চরে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি তিস্তা ইস্যুতে আগেও লংমার্চসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু এখন যখন সংস্কার বা নির্বাচনী ইস্যুই আলোচনার তুঙ্গে তখন এ কর্মসূচিতে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব এমন গুরুত্ব দেওয়ায় এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। প্রশ্ন উঠেছে যে বিএনপি এ কর্মসূচি থেকে কি অর্জন করতে চাইছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, এ কর্মসূচির মাধ্যমে একই সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দলটি সরকার ও জনগণকে বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলছেন, আন্দোলনকারী ছাত্ররাসহ এখন সক্রিয় প্রায় সব দলই ভারত বিরোধী হিসেবে পরিচিত। এ কর্মসূচির মাধ্যমে তার নেতৃত্বটি বিএনপি নিতে চাইছে যাতে অন্য কেউ এটা নিয়ে সুবিধা করতে না পারে। আবার ৫টি জেলায় হলেও পুরো উত্তরাঞ্চলে দলটি সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তিস্তা জাতীয় ইস্যু হওয়াতে এটিকে কেন্দ্র করে এই যে জনসমাগম ঘটানো হচ্ছে তা থেকে প্রতিশ্রুত সময়ে নির্বাচন করতে হবে-সেই বার্তাও সরকার পাবে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অবশ্য বলছেন, তিস্তায় পানি সংকটের কারণে উত্তরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট হয় এবং সে কারণেই তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জনগণকে জড়ো করছেন তারা।ও তারা প্রস্তুত।
Comments
Post a Comment